এই দেশ তো আমরা চাইনি। রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করবেন, সরকারে থাকবেন দেশ ও জনগণের সমৃদ্ধি করবার জন্য, এটাই স্বাভাবিক।
রাজনৈতিক আদর্শ থাকবে, কে কার চেয়ে কোন পদ্ধতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে! তবে হ্যাঁ, মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য থাকতে হবে এবং ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর। রাজনীতিবিদরা তো আর ইতিহাস লিখতে পারেন না। ইতিহাসবিদরাই ইতিহাস লিখবেন। আর যদি রাজনীতিবিদরা ইতিহাস লিখতে যান, তাহলে তো দেশের সর্বনাশ হবেই। বর্তমানে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি।
রাজনৈতিক আদর্শ থাকবে, কে কার চেয়ে কোন পদ্ধতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে! তবে হ্যাঁ, মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য থাকতে হবে এবং ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর। রাজনীতিবিদরা তো আর ইতিহাস লিখতে পারেন না। ইতিহাসবিদরাই ইতিহাস লিখবেন। আর যদি রাজনীতিবিদরা ইতিহাস লিখতে যান, তাহলে তো দেশের সর্বনাশ হবেই। বর্তমানে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি।
দেখতে পাচ্ছি, সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাল্টে যাচ্ছে পাঠ্যপুস্তকে। দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাই করেনি, বিভিন্ন বাহিনী গঠন করে সাধারণ মানুষ, মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে হত্যা করেছে। এ জন্য তারা রাজাকার, আল-শামস, আল-বদর, শান্তি কমিটি গঠন করে।
এ ছাড়া ছিল জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ, বর্তমানে এর নাম- বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
এ ছাড়া ছিল জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ, বর্তমানে এর নাম- বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
এই সব বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাদের মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি চিনিয়ে দিতো, হিন্দুদের বাড়ি কোনটা দেখিয়ে দিতো। এরা নিজেরাই মেয়েদের ধরে নিয়ে পাকিবাহিনীর হাতে তুলে দিতো। মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করতো পবিত্র ধর্ম ইসলামের নামে, পাকিস্তানের অখণ্ডতার নামে।
মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের বলতো- ভারতীয় চর, ভারতীয় দালাল ইত্যাদি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সমাজতন্ত্রী ছিলেন না। ছিলেন না কমিউনিস্টও। তবে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস বঙ্গবন্ধুকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন তাজউদ্দিন আহমদ। আর মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন এম এ জি ওসমানী। আর তার অধীনে নয় সেক্টরে নয়জন সেক্টর প্রধান ছিলেন। তারই একটির প্রধান ছিলেন জিয়াউর রহমান। তার বাহিনীর নাম ছিল- জেড ফোর্স।
এদিকে, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে ভারত ১৯৭১ সালে প্রায় এক কোটি লোককে আশ্রয়, সাহায্য ও মু্ক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিয়েছে। তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া দিয়েছে নৈতিক সমর্থন আর অস্ত্র সাহায্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন বাংলাদেশের সক্রিয় বিরোধিতা করেছে। মার্কিনীরা তো সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েই দিয়েছিল মুক্তিযােদ্ধা দমনে। সোভিয়েত রাশিয়া হুমকি দিলো সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগর মুখী হলে রাশিয়াও তার নৌবহর পাঠাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যে। এর পরেই ক্ষান্ত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আর অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী বাঙালি বাহিনীর ( রাজাকার, আল-বদর...) প্রধান ছিলেন গোলাম আযম। এ সবই ইতিহাস।
এ ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা বার বার করা হলেও ইতিহাসবিদেরা সঠিক ইতিহাসই লিখে যাবেন। এখন থেকে একশ/দেড়শ বছর পরের একজন গবেষক ঠিকই জানবেন, ১৯৭১ সালে কী হয়েছিল, কারা বিরোধিতা করেছিলেন, আর কে কী করেছিলেন।
সে কারণেই বলি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতে আসা উচিত। অর্থাৎ বাংলাদেশে যে দলই রাজনীতি করবে, তাদের মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান করেই রাজনীতি করতে হবে। আর যারা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তাদের কোনোরকম অধিকার নেই বাংলাদেশে রাজনীতি করার। যদিও তারা এখন বলছে, ১৯৭১ সালে তারা পাকিস্তানের অখণ্ডতার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু কোনো অপরাধ কর্ম করেননি। এটা আরো একটা ডাহা মিথ্যা। জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম-এর ওই সময়কার সংখ্যাগুলো পড়লেই দেখা যাবে যে, তারা কী করেছে! তারা যদি পাকিস্তানের অখণ্ডতার পক্ষে থাকে, তবে এখন তাদের বাংলাদেশে থাকবার দরকার কী! তারা সবাই পাকিস্তানে চলে যাক। ওইখানে গিয়ে অখণ্ডতার জন্য লড়াই করুক। কারণ, সেখানেও প্রদেশ আছে। তাদের কেউ কেউ স্বাধীন হতে চায়।
আমার বক্তব্যের একটি হলো- যারাই স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করবেন, তারা জামায়াতে ইসলামীকে প্রশ্রয় দেবেন না। সেই সঙ্গে এই দলকে স্বাধীন দেশে রাজনীতি করার অধিকার দেবেন না। এদের রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে। এ ছাড়াও দলটির মুখে ও নামে ইসলাম থাকলেও ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিল সবসময়। এখনো আছে।
আবার দ্বিতীয় প্রস্তাবনা হলো, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে আমাদের সংবিধানে ও নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে অন্তত আগামী ২৫ বছরের জন্য একটি আইন/ধারা তৈরি করা হোক। সেটা হলো, যে সব রাজনীতিবিদদের বয়স ৪৫ বছর পার হবে, তারপর তারা রাজনীতি থেকে অবসরে যাবেন। এরপর তারা মন্ত্রী, এমপি, প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। রাষ্ট্রপতির কথা আলাদা।
এর কারণ, হিসেবে আমার মনে হয়েছে, যাদের বয়স এখন ৫০ এর ওপরে, তারাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছেন। কামড়া-কামড়ি করছেন।
কিন্তু এখনকার তরুণেরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং তার প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা পোষণ করেন। তারা দেশকে অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত, শিল্প-বাণিজ্য নিয়ে বেশি ভাবনা-চিন্তা করেন। সুতরাং তারাই দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই বয়স্ক রাজনীতিবিদরাই এখন দেশের জন্য অভিশাপ। শাপ মোচনের জন্য রাজনীতি থেকে সবক্ষেত্রেই তরুণদের দরকার। সেই কারণেই, আগামী ২৫ বছরের জন্য ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে যাদের বয়স, তারা অবসরে যাবেন। তরুণেরা ঠিকই দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য বিমোচন করতে পারবে। কিন্তু এর মূল বাধাই এখন বয়স্ক রাজনীতিবিদেরা। দেশের উন্নয়নের জন্য এদের এখনই অবসরে পাঠিয়ে দেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে।
No comments:
Post a Comment